বাংলাদেশে নিরাপত্তা খাত একটি দ্রুত বর্ধনশীল ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শিল্প কারখানা—সবাই এখন পেশাদার নিরাপত্তা সেবার ওপর নির্ভরশীল। আপনি যদি এই খাতে একটি সফল ও বিশ্বস্ত ব্যবসা গড়ে তুলতে চান, তাহলে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো সঠিকভাবে সিকিউরিটি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করা। এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া অনেকের কাছেই জটিল এবং সময়সাপেক্ষ মনে হতে পারে। কিন্তু চিন্তার কোন কারণ নেই! এই বিস্তারিত গাইডে আমরা ধাপে ধাপে আলোচনা করব বাংলাদেশে সিকিউরিটি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন এর সম্পূর্ণ পদ্ধতি সম্পর্কে।

প্রাইভেট সিকিউরিটি এজেন্সি রেজিস্ট্রেশন শুধু আইনী নয়; এটি আপনার ক্লায়েন্টদের কাছে আপনার বিশ্বস্ততা এবং পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়। একটি বৈধ সিকিউরিটি ব্যবসার লাইসেন্স ছাড়া আপনি বড় কোনো প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বা সরকারি প্রকল্পে সিকিউরিটি সার্ভিস প্রদানের সুযোগই পাবেন না। চলুন জেনে নেওয়া যাক সিকিউরিটি গার্ড কোম্পানি খোলার নিয়ম এবং সিকিউরিটি ফার্ম নিবন্ধন এর প্রতিটি ধাপ।

Registration process

সিকিউরিটি ব্যবসা শুরুর যোগ্যতা কী?

সিকিউরিটি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন কীভাবে করতে হয়? সে প্রশ্নে যাওয়ার আগে জেনে নিন আপনার প্রাথমিক যোগ্যতা আছে কিনা। বাংলাদেশে সিকিউরিটি ব্যবসার লাইসেন্স পেতে নিম্নলিখিত শর্তাবলী পূরণ করতে হবে:

  1. কোম্পানি গঠন: আপনাকে প্রথমে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (RJSC) থেকে একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হতে হবে।
  2. নির্বাহীর অভিজ্ঞতা: কোম্পানির পরিচালক বা মালিকের নিরাপত্তা খাতে (যেমন: সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার বা অন্য কোনো স্বনামধন্য সিকিউরিটি সার্ভিসে) প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক।
  3. ন্যূনতম মূলধন: একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে, যদিও এর সঠিক পরিমাণ সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়।
  4. অফিস স্পেস: ঢাকা বা অন্য কোনো বিভাগীয় শহরে একটি স্থায়ী ও উপযুক্ত অফিসের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

Registration process

সিকিউরিটি সার্ভিস রেজিস্ট্রেশন: ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া

এবার আসুন মূল আলোচনায়। সিকিউরিটি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করলে যেকোনো জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

ধাপ ১: কোম্পানি নিবন্ধন (RJSC)

প্রথম ধাপে, আপনাকে একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন করতে হবে। এর জন্য আপনাকে কোম্পানির নাম, মূল উদ্দেশ্য (যেখানে সিকিউরিটি সার্ভিস প্রদান উল্লেখ থাকবে), Memorandum and Articles of Association (MEMARTS) এবং পরিচালকদের বিবরণ জমা দিতে হবে। এটি সিকিউরিটি ফার্ম নিবন্ধন এর ভিত্তি তৈরি করবে।

ধাপ ২: গৃহায়ন মন্ত্রণালয়/পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে অনুমোদন

এটি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশে সিকিউরিটি সার্ভিসের লাইসেন্স কোথায় করতে হয়? এর উত্তর হলো গৃহায়ন মন্ত্রণালয় (Ministry of Home Affairs)। আপনাকে এই মন্ত্রণালয়ে একটি অ্যাপ্লিকেশন জমা দিতে হবে, যেখানে নিম্নলিখিত সংযুক্ত করতে হবে:

  • RJSC থেকে প্রাপ্ত কোম্পানি নিবন্ধন সার্টিফিকেট।
  • কোম্পানির MEMARTS।
  • পরিচালকদের পরিচয়পত্র (জাতীয় পরিচয়পত্র), ফটো এবং নিরাপত্তা খাতে তাদের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট।
  • অফিসের ঠিকানা প্রমাণের জন্য দলিল বা রেন্ট ডিড।
  • ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট।
  • টিন ও ভ্যাট সার্টিফিকেট।

এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া তে যাচাই-বাছাইয়ের পর, গৃহায়ন মন্ত্রণালয় থেকে একটি ‘নীতিগত অনুমতি’ (Principle Approval) প্রদান করা হয়।

ধাপ ৩: প্রয়োজনীয় অন্যান্য লাইসেন্স ও সার্টিফিকেট সংগ্রহ

নীতিগত অনুমতি পাওয়ার পর, আপনাকে আরও কিছু সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। যেমন:

  • ট্রেড লাইসেন্স: সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা থেকে।
  • ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে।
  • ফায়ার লাইসেন্স: ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে।

এই ধাপগুলো ঢাকায় সিকিউরিটি সার্ভিসের লাইসেন্স এর ক্ষেত্রেও একই রকম।

ধাপ ৪: চূড়ান্ত লাইসেন্স Issuance

উপরে উল্লিখিত সমস্ত অনুমোদন এবং গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে জমা দিলে, তারা চূড়ান্তভাবে সিকিউরিটি ব্যবসার অনুমতি প্রদান করবে। এটি-ই হলো আপনার কাঙ্খিত সিকিউরিটি লাইসেন্স।

Registration process

সিকিউরিটি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করতে কত খরচ হয়?

এটি একটি খুবই সাধারণ প্রশ্ন। সিকিউরিটি কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন ফি কত? – এর সঠিক উত্তর হলো, এটি একটি স্থির নয়। মোট খরচ যেমন: সরকারি ফি, লিগ্যাল কনসালটেন্টের ফি (যদি নিয়োগ দেন), অফিস ভাড়া ইত্যাদি। তবে একটি আনুমানিক ধারণা হিসেবে, ঢাকায় সিকিউরিটি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন এর জন্য প্রাথমিক বিনিয়োগ হতে পারে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা।

সিকিউরিটি লাইসেন্স পেতে কত সময় লাগে?

পুরো রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাধারণত ৪ থেকে ৮ মাস সময় লাগতে পারে। Documentos প্রস্তুতিকরণ, বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন এবং তাদের যাচাই-বাছাইয়ের জন্য এই সময় প্রয়োজন। যদি সিকিউরিটি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনের জন্য কী কী প্রয়োজন সবকিছু আগে থেকেই প্রস্তুত থাকে, তবে সময় কমতেও পারে।

Registration process

লাইসেন্স পাওয়ার পর: আপনার দায়িত্ব 

বাংলাদেশ প্রাইভেট সিকিউরিটি এজেন্সি নিবন্ধন এবং লাইসেন্স পাওয়াই শেষ নয়, বরং এটি সফলতার শুরু। লাইসেন্স পাওয়ার পর আপনাকে কিছু নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে:

  • আপনাকে অবশ্যই উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং পুলিশ ভেরিফিকেশনকৃত সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে, নিরাপত্তা গার্ড নিয়োগের চুক্তি পত্রের নমুনা সম্পর্কে জানা আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সঠিক চুক্তিপত্র আইনি ঝামেলা থেকে আপনাকে রক্ষা করবে।
  • গৃহায়ন মন্ত্রণালয় সময়ে সময়ে আপনার কোম্পানির কার্যক্রম তদারকি করতে পারে।
  • একটি পেশাদার ও নৈতিক ব্যবসায়িক চর্চা বজায় রাখতে হবে।

যদি আপনি সিকিউরিটি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চান অথবা আপনার ব্যবসা বা বাসার জন্য বিশ্বস্ত সিকিউরিটি সার্ভিস খুঁজছেন, তাহলে আজই যোগাযোগ করুন Care Force BD-এর সাথে।
হটলাইন: 01716401771
ওয়েবসাইট: https://careforcebd.com/

FAQ

প্রশ্ন ১: সিকিউরিটি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন কীভাবে করতে হয়?

উত্তর: প্রক্রিয়াটি মূলত চার ধাপে: প্রথমে RJSC-তে কোম্পানি নিবন্ধন, গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে আবেদন, প্রয়োজনীয় অন্যান্য লাইসেন্স সংগ্রহ এবং শেষে চূড়ান্ত লাইসেন্স Issuance। উপরের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

প্রশ্ন ২: সিকিউরিটি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনের জন্য কী কী প্রয়োজন?

উত্তর: প্রধান Documents গুলোর মধ্যে রয়েছে কোম্পানি নিবন্ধন সার্টিফিকেট, MEMARTS, পরিচালকদের NID ও অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট, অফিসের দলিল, টিন-ভ্যাট সার্টিফিকেট এবং ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট।

প্রশ্ন ৩: সিকিউরিটি লাইসেন্স পেতে কত সময় লাগে?

উত্তর: Documentos সঠিক ও সম্পূর্ণ থাকলে সাধারণত ৪ থেকে ৮ মাস সময় লাগে।

প্রশ্ন ৪: বাংলাদেশে সিকিউরিটি সার্ভিসের লাইসেন্স কোথায় করতে হয়?

উত্তর: চূড়ান্ত লাইসেন্সের জন্য গৃহায়ন মন্ত্রণালয় (Ministry of Home Affairs) দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান কর্তৃপক্ষ।

প্রশ্ন ৫: একটি সিকিউরিটি কোম্পানির মালিকের কী ধরনের অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন?

উত্তর: সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার বা অন্য কোনো স্বীকৃত সিকিউরিটি সংস্থায় প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা থাকা বাঞ্ছনীয় এবং অনেক ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক।

 

আরও তথ্যের জন্য এবং আমাদের সেবা নেওয়ার জন্য আমাদের নিরাপত্তা গার্ড নিয়োগের চুক্তি পত্রের নমুনা ব্লগ পোস্টটি দেখুন।