ভাবুন, এক সকালে আপনার প্রতিষ্ঠানের গেটের সামনে থাকা নিরাপত্তা গার্ডটি হঠাৎ কাজের সময় আহত হলো। এখন প্রশ্ন আসে—তার চিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ, বা বীমার দায়িত্ব কে নেবে? ঠিক এই জায়গাটাতেই “সিকিউরিটি গার্ডের বীমা ও সুবিধা” বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশে হাজারো নিরাপত্তা কর্মী দিন-রাত প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তারা সঠিক বীমা বা ন্যায্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আজ আমরা দেখব, কীভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সিকিউরিটি গার্ডদের জন্য যথাযথ বীমা ও সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে।
সিকিউরিটি গার্ডদের কাজ ও ঝুঁকি
নিরাপত্তা কর্মীরা মূলত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ, সম্পত্তি পাহারা, ভিজিটর ব্যবস্থাপনা, এমনকি জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়ার কাজ করেন। এই কাজগুলোতে সর্বদা ঝুঁকি থাকে — যেমন চুরি-ডাকাতি প্রতিরোধে সংঘর্ষ, শারীরিক আঘাত, বা দুর্ঘটনা।
একটি আন্তর্জাতিক বীমা বিশ্লেষণে বলা হয়েছে যে, Security Guard Insurance এমন এক কাঠামো যা পেশাগত দায়, সাধারণ দায়, ও দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতির জন্য সুরক্ষা দেয় (SouthGroup Insurance)।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, বাস্তব চিত্র একটু ভিন্ন। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, অনেক গার্ড ২৪ ঘণ্টা কাজ করেও মাত্র ৬,০০০–৭,০০০ টাকা পান, যেখানে আইন অনুযায়ী তাদের আরও বেশি পাওয়া উচিত (The Business Standard)। ফলে, বীমা ও সুবিধা নিশ্চিত করা এখন শুধু ন্যায্যতাই নয়—এটা দায়িত্বও বটে।
কোন বীমাগুলো থাকা জরুরি
একজন সিকিউরিটি গার্ডের জন্য যে বীমাগুলো কার্যকর হতে পারে, সেগুলো হলো:
- পেশাগত দায় বীমা (Professional Liability Insurance)
যদি কোনো ভুল বা অবহেলার কারণে ক্ষতি হয়, এই বীমা তা কাভার করে। যেমন—একজন গার্ড ভুলবশত প্রবেশ নিষিদ্ধ কারো অনুমতি দিলেন, ফলে সম্পত্তি ক্ষতি হলো। - সাধারণ দায় বীমা (General Liability Insurance)
গার্ডের দায়িত্ব পালনের সময় কেউ আহত হলে বা কোনো সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হলে, এই বীমা সেই ক্ষতিপূরণ দেয়। - কর্মস্থল দুর্ঘটনা বা ওয়ার্কার্স কমপেনসেশন (Workers’ Compensation)
কাজের সময় ইনজুরি, দুর্ঘটনা বা মৃত্যুর ক্ষেত্রে কর্মী বা তার পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করে।
এই বীমাগুলোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তাদের আর্থিক ঝুঁকি কমায় এবং কর্মীদের আস্থা বাড়ায় (ER Munro & Company)।
সিকিউরিটি গার্ডদের জন্য থাকা উচিত সুবিধাসমূহ
শুধু বীমা নয়, দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব সুবিধাও গার্ডদের মনোবল ও কর্মক্ষমতায় প্রভাব ফেলে।
বাংলাদেশে শ্রম আইন অনুযায়ী, নিরাপত্তা কর্মীরা অন্যান্য শ্রমিকদের মতোই ন্যূনতম বেতন, ওভারটাইম, ছুটি ও উৎসব ভাতা পাওয়ার অধিকারী (Bangladesh Labour Act, 2006)।
একটি গেজেট অনুসারে, গার্ডদের জন্য সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারিত হয়েছে—গ্রেড ৪ গার্ডদের জন্য ৫,৬০০ টাকা বেসিক বেতন, অন্যান্য ভাতা ছাড়া (The Financial Express)।
তবে আধুনিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো এর বাইরে আরও কিছু সুবিধা দিচ্ছে (Careforce BD):
- রাতের ডিউটির জন্য আলাদা ভাতা
- বাসস্থান বা খাওয়ার ব্যবস্থা
- ইউনিফর্ম, বুট, টর্চ, এবং রেডিও সেট
- স্বাস্থ্যবিমা বা জরুরি চিকিৎসা সুবিধা
- প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতির সুযোগ
একজন গার্ডের মন্তব্য ছিল, “আমার কোম্পানি যখন মেডিকেল বিমা চালু করল, তখন বুঝলাম তারা শুধু কাজের জন্য নয়, আমাদের মানুষ হিসেবেও মূল্য দেয়।”
প্রতিষ্ঠান কীভাবে এই বীমা ও সুবিধা কার্যকর করবে
- নিয়োগের সময় চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন – গার্ডের বেতন, ওভারটাইম, ছুটি, বীমা কাভারেজ ইত্যাদি।
- একটি নির্ভরযোগ্য বীমা কোম্পানি বেছে নিন – যারা নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি বোঝে এবং দ্রুত ক্লেইম প্রক্রিয়া করে।
- নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিন – যাতে গার্ডরা দুর্ঘটনা কমাতে পারে এবং বীমা ক্লেইমের প্রয়োজনও কমে।
- ওভারটাইম ও ভাতা সময়মতো দিন – এতে কর্মীরা সন্তুষ্ট থাকবে ও চাকরি বদলের হার কমবে।
- রেকর্ড রাখুন – বীমা নবায়ন, ক্লেইম হিস্ট্রি, দুর্ঘটনার নথি, প্রশিক্ষণ উপস্থিতি ইত্যাদি।
একজন ম্যানেজারের ভাষায়, “আমরা ওভারটাইম পেমেন্ট ও ইনজুরি বীমা চালু করার পর থেকে কর্মীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্বশীল।”
উপসংহার
সিকিউরিটি গার্ডদের বীমা ও সুবিধা শুধু মানবিক দায় নয়—এটি একটি প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ। সঠিক সুবিধা ও সুরক্ষা কর্মীদের মনোবল বাড়ায়, ঝুঁকি কমায়, এবং নিরাপত্তা সেবা আরও মানসম্মত করে তোলে।
যদি আপনি একজন ব্যবসা মালিক বা প্রশাসনিক কর্মকর্তা হন, এখনই সময় আপনার প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি টিমের সুবিধা ও বীমা পলিসি রিভিউ করার। একটি ছোট পদক্ষেপই বড় নিরাপত্তা গড়ে তুলতে পারে।




